আইন-আদালতরাজনীতিরাজশাহী

আওয়ামী লীগ কর্মী নয়নালের মৃত্যু ঘিরে রহস্য, ময়নাতদন্ত প্রত্যাখান করে শ্রমিক লীগের মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক

গেলো বছরের ১২ ডিসেম্বর পঁচা গন্ধের সূত্র ধরে ম্যানহোল থেকে আওয়ামী লীগ কর্মী মো. নয়নাল উদ্দিনের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ম্যানহোলটি ছিল রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর রাজনৈতিক কার্যালয়ের ঠিক পাশেই। দিন-রাত ওই রাজনৈতিক কার্যালয়ের আশ-পাশেই ঘুরফির করতো নয়নাল।

পরিবারের ভাষ্য, তার (নয়নালের) কোন শত্রু ছিল না। তবুও খুন হয় নয়নাল। এ ঘটনায় নিহত নয়নাল উদ্দিনের বোন কুলসুম বেগম অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে বোয়ালিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ঘটনার প্রায় তিন মাস গড়িয়েছে। তবুও, মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে এখন পর্যন্ত নয়নাল হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ, গ্রেপ্তার হয়নি কেউ। যেনোে এক রহস্যের চাদরে ঘিরে আছে নয়নালের মৃত্যু।

এনিয়ে তৃণমূল আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা গেছে অসোন্তষ। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মী নয়নাল উদ্দিনের (৬০) মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। একই সঙ্গে পুনরায় ময়নাতদন্ত এবং মামলার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে।

শনিবার (৯ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত রাজশাহীর সিঅ্যান্ডবি মোড়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) সদর দপ্তরের সামনে এসব দাবিতে সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

সপ্তাহ খানেক আগেও ছাত্রলীগ নয়নাল হত্যার বিচার চেয়ে করেছে মানববন্ধন। এর আগে নয়নালের মৃত্যু রহস্য উদঘাটন করতে ১০ ফেব্রুয়ারি এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে ‘সচেতন রাজশাহীবাসী’ লেখা ব্যানারে মানববন্ধন হয়। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এতে অংশ নেন। সবমিলিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে নয়নাল হত্যাকে কেন্দ্র করে।

শনিবার সকালের মানববন্ধনের আয়োজন করে জাতীয় শ্রমিক লীগ রাজশাহী মহানগর শাখা। কর্মসূচি চলাকালে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন-মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি মাহাবুল আলম। সাধারণ সম্পাদক আক্তার আলীর পরিচালনায় মহানগর আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সোহেল, জাতীয় শ্রমিক লীগের মহানগরের সহ-সভাপতি সেলিম রেজা বাইরন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাশেদুজ্জামান রাশেদ, রাজশাহী সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি রেজায় করিম বুলবুলসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।

মানববন্ধনে বক্তরা বলেন, নয়নালের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তার বোন কুলসুম বেগম অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেছিলেন। সম্প্রতি নয়নালের মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছে পুলিশ। এতে বলা হয়েছে, ওপর থেকে পড়ে মাথায় আঘাত পেয়ে নয়নাল মারা যান।

তবে এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে সমাবেশ থেকে বক্তারা বলেন, এমপি ফারুক চৌধুরীর কার্যালয়ের ম্যানহোল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে নয়নালের মৃত্যুর সঠিক তদন্ত হচ্ছে না। রামেক ফরেনসিক বিভাগ থেকে ময়নাতদন্তের যে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে সেটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তাই তারা নয়নালের মরদেহের পুনরায় ময়নাতদন্ত দাবি করেন। পাশাপাশি নয়নালের মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটন ও জড়িত যিনিই হন না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। তা না হলে আগামীতে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

দলীয় নেতাকর্মীরা বলেন, নানা সময় বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছেন এ এমপি। কলেজ শিক্ষক থেকে শুরু করে অনেক সাধারণ মানুষও এ রাজনৈতিক কার্যালয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুমতি ছাড়া কেউ প্রবেশ কিংবা বের হতে পারেন না। সেখানে অর্ধগলিত অবস্থায় নয়নালের মরদেহ পাওয়া রহস্যজনক।

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগরীর শিরোইল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহাফুজুর রহমান বলেন, প্রায় দুই সপ্তাহ হলো ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, ওপর থেকে পড়ে মাথায় আঘাত পেয়ে নয়নাল মারা যান। এ প্রতিবেদন পাওয়ার পর সিনিয়র স্যারেরা বসেছিলেন। তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। সিনিয়র স্যারেরা আবার বসবেন। তারপর পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের ব্যাপারে কথা হয় বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ডাক্তারে কি রিপোর্ট দিছে, তা আমরা বলতে পারবো না। সেটা তাদের ব্যাপার।’ ছাদ থেকে পড়েই যদি যায়, তবে মানহোলের ভেতরে লাশ কিভাবে ডুকলো, আর ওই সময়কার সিসিটিভি ফুটেজ কোথায় হারালো প্রশ্নের জবাবে ওসি হুমায়ুন বলেন, ‘সবকিছু নিয়ে এখনো তদন্ত চলছে। সুষ্ঠ তদন্তের সাপেক্ষে এখন কিছু বলা যাবে না। পূর্ণ তদন্তের পর আমরা সবকিছু নিশ্চিত হয়েই গণমাধ্যমকে জানাতে পারবো, তার আগে নয়।’

অগ্নিবাণী/এফএ

Leave a Reply