আমের দামে আগুন
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আমের মৌসুম প্রায় শেষ। তবুও রাজশাহীর বাজারগুলোয় রয়েছে আমের সহজলভ্যতা। মৌসুমের শেষ ভাগে এসেও ক্রেতাদের আমের চাহিদা তুঙ্গে থাকায় দামেও লেগেছে আগুন। ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের অধিকাংশ ক্রেতাই ডাক্তার, ব্যাংকার, শিক্ষক ও সরকারি-বেসরকারি চাকরি করা বড় কর্মকর্তা এবং ধনাঢ্য ব্যক্তি। সাধারণ ক্রেতা নেই বললেই চলে।
শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাজশাহীর শিরোইল ঢাকা বাস টার্মিনাল, সাহেব বাজার, লক্ষ্মীপুরসহ কয়েকটি স্থানে সরেজমিন ঘুরে এসব তথ্য মিলেছে। রাজশাহী মহানগরীর শিরোইল ঢাকা বাস টার্মিনাল এলাকায় দেখা গেছে আমের সবচেয়ে বেশি সমারোহ। বর্তমানে বাজারে মিলছে বারি-৪, আম্রপালি, আশি^না, ঝিনুক আশি^না ও গৌরমতি আম। এর মধ্যে বারি-৪ জাতের আম স্বাদ ও ধরন ভেদে দুই প্রকারের পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে এ আমের দামেও কিছুটা ফারাক রয়েছে।
গাছে আমের ঘাটতি ও মানুষের আম কেনার চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে দাম। বর্তমানে বাজারে বারি-৪ জাতের আম আকার, ধরন ও স্বাদভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে। বাজারে এখনও আম্রপালির অস্তিত্ব মিললেও ব্যবসায়ীরা কেজিপ্রতি এর দাম হাঁকছেন ২৫০ টাকা। তবে প্রথমদিকে গৌরমতি ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বর্তমানে তা কমে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তুলনামূলক কম স্বাদের আশি^না ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও বেশি স্বাদের ঝিনুক আশি^না জাতের আম বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে।
বিক্রেতারা বলছেন, শেষদিকে আমের চড়া দাম হলেও আম বিক্রি নিয়ে কোনো সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না। আমের বাজারে পর্যাপ্ত চাহিদা রয়েছে। তবে চাহিদানুসারে আম সরবরাহে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এ কারণে রাজশাহীর বাইরের জেলা থেকে আম সংগ্রহ করে আনতে হচ্ছে তাদের।
ব্যবসায়ীরা জানান, রাজশাহী জেলার মধ্যে মোহনপুর, বাঘা ও চারঘাট উপজেলায় সামান্য কিছু আশি^না ও বারি-৪ আম মিললেও তারা অধিকাংশ আম আনছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলা থেকে। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের দাম নওগাঁ জেলার চেয়ে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা বেশি। দামের এ তারতম্য হওয়ায় এ বাজারের চার ভাগের তিন ভাগ আম আনছেন নওগাঁর সাপাহার এলাকা থেকে।
প্রতিবছর শিরোইল ঢাকা বাস টার্মিনাল এলাকায় বসে আমের দোকান। প্রথমদিকে এখানে প্রায় ২০ থেকে ২২ দোকান বসলেও বর্তমানে রয়েছে ৮ থেকে ১০টি আমের দোকান।
এ এলাকার আম ব্যবসায়ী মোমিন ইসলাম বলেন, শিরোইল বাস টার্মিনাল আম বাজারের অধিকাংশ ক্রেতাই স্থানীয়। স্থানীয় ক্রেতারা আম কেনেন ৫, ১০ অথবা ২০ কেজি করে। আর ঢাকা, চট্টগ্রাম কিংবা অন্যান্য স্থানের বাইরের যাত্রীরা আম কেনেন বড়জোর দুই থেকে তিন কেজি।
বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডে (বিজিবি) চাকরি করেন মোস্তাফিজুর রহমান রানা। দুদিনের জন্য যাচ্ছেন ঢাকা। তাই, ঢাকায় বোন-দুলাভাইয়ের জন্য ঢাকা বাস টার্মিনালে কিনতে এসেছেন কিছু আম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমের দাম শুনে মনে হচ্ছে ‘আমের দামে আগুন লেগেছে’। দাম অনেক বেশি হওয়ায় ১০ কেজির জায়গায় এখন ৫ কেজি নিতে হচ্ছে।
শেষ সময়ে আমের দাম ও জোগানের বিষয়ে জেলার কৃষি সম্প্রসারণ তথ্য কেন্দ্রের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ হিল কাফি বলেন, গত বছর করোনার কারণে বন্ধ ছিল পরিবহন। গত বছর ফলন বেশি থাকলেও আম কেনার মতো বাজারে মানুষ ছিল না। কিন্তু এবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক কিন্তু গাছে আম নেই। আর তাই চাহিদা বেশি হওয়ায় প্রথম থেকেই চড়া দাম। শেষ সময়ে আমের পর্যাপ্ততা না থাকায় ব্যবসায়ীরা চড়া দাম নেয়।
অগ্নিবাণী/এফএ