সদস্য সচিব ছাড়াই রাজশাহী মহানগর বিএনপির কর্মসূচী, বাকবিতন্ডা শেষে হাতাহাতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহী মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব বাদেই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মেজর জেনারেল শহীদ জিয়াউর রহমানের ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। তবে এ কর্মসূচীতে বিএনপির সদস্য সচিব মো. মামুন-অর-রশিদকে আমন্ত্রণ না জানানোয় বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

সোমবার (৩০ মে) রাত পৌনে ৮টার দিকে নগরীর মালোপাড়া হার্ডওয়ারপট্টিতে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় উভয় পক্ষের কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছে।

শহীদ রায়হান পিন্টু, রাসেল আহম্মেদ রয়েল, বজরুজ্জামান মোহন সহ একাধিক প্রতক্ষদর্শী নেতাকর্মীরা জানান, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমানের ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার সন্ধ্যার পর নগরীর মালোপাড়ায় বিএনপি কার্যালয়ে রাজশাহী মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে একটি আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

বিএনপির দলীয় কর্মসূচী হলেও এর মূল আয়োজক ছিলেন মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা। সন্ধার পর কর্মসূচীতে সকল নেতাকর্মীর উপস্থিতি ছিল । তবে শুধু উপস্থিত ছিলেন না, নগর কমিটির সদস্য সচিব মামুন-অর-রশিদ। বিষয়টি পরে জানতে পেরে তিনি বিএনপি কার্যালয়ে এসে কর্মসূচীতে যোগ দেন। কর্মসূচীতে তার যোগদানের পর আপত্তি তোলেন নজরুল হুদা। সদস্য সচিব মামুন থাকলে তিনি ওই কর্মসূচীতে থাকবেন না বলেও জানান সকলকে।

অপরদিকে সদস্য সচিব মামুনের অভিযোগ, তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে কর্মসূচীর কথা জানানো হয়নি।

এদিকে সদস্য সচিব বাদেই কেন এ কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়েছে তা জানতে চান মামুনের নেতাকর্মীরা। এমন প্রশ্ন ও তর্কবিতর্কের সৃষ্টি হলে নজরুল হুদা ও ওয়ালিউল হক রানা সমর্থকদের সাথে মামুনের সমর্থকদের কথা কাটাকাটির শুরু হয়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষ হাতাহাতিতে জড়িয়ে পরে। এতে পুরো কর্মসূচীই ভেস্তে যায়।

সংঘর্ষ চলাকালীন দলীয় কার্যলয়ের কিছু চেয়ার ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। এছাড়াও দুগ্রুপের হাতাহাতিতে কয়েকজন নেতাকর্মী আহতও হন। তবে পূর্বেই পুলিশের উপস্থিতি থাকার কারণে খুব বেশি হাতাহাতি বা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।

রাজশাহী মহানগর বিএনপির আলোচনা সভায় হাতাহাতির পর ছেড়া টি-শার্ট পরিহিতি এক বিএনপি কর্মীর ছবি।

এবিষয়ে কথা হয় মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মামুন-অর-রশিদের সাথে। তিনি বলেন, দলীয় একটি কর্মসূচী হচ্ছে অথচ, আমিই জানি না। তারপরও জানার পরপরই দলীয় কার্যালয়ে আমি উপস্থিত হয়েছি। কিন্তু আমার উপস্থিতি কোনো ভাবেই মেনে নিচ্ছেন না নগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা। কেন মানছেন না, সেটা তিনিই ভালো জানেন। তবে এমন ঘটনাটি দলের অন্যান্য নেতাকর্মীরা মোটেই ভালো চোখে দেখছেন না বলেও জানান মহানগর বিএনপির এ নেতা।

জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা বলেন, ওর সাথে (সদস্য সচিব মামুন) কিছু খারাপ ছেলেপেলে থাকে। তারা প্রায় মিটিং এ ঝামেলা করে। যার কারণে আমি ওই সময় বলেছি, তোমরা থাকো আমি এ কর্মসূচীতে থাকবো না। আমি বের হওয়ার হয়ে চলে আসার কারণে তখন আমার সাথেকার লোকজনেরা প্রতিবাদ করে, যার কারণে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

তিনি প্রতিবেদককে বলেন, আহব্বায়ক ইশা ভাই বয়স্ক মানুষ। তাই তাকে আমরা অতোটা গুরুত্ব দেয় না। আমিই ওই কর্মসূচির সব কাজ করেছিলাম। সেখানে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন নেতাকর্মীরাও এসেছিল। কিন্তু তারা আসায় মিটিংটায় পন্ড হয়ে যায়। পরে আমার সাথে থাকা সাতজন মামুনের অংশগ্রহণ নিয়ে প্রতিবাদ জানায়। এনিয়েই গন্ডগোলের সৃষ্টি হয়।

এদিকে নগর বিএনপির আহ্বায়ক এ্যাড. এরশাদ আলী ঈশা বলেন, কোন মিটিং বা কার্যক্রম আমার আহব্বানে সদস্য সচিবের মাধ্যমেই পরিচালিত বা অনুষ্ঠিত হবে। আহব্বায়ক ও সদস্য সচিবের উপস্থিতি ছাড়া কোনো দল বা সংগঠনের কর্মসূচী হয় না। তারপরও ওই প্রোগামে উপস্থিত হতে আমার দেরি হয়েছিল। সেখানে গিয়ে যখন দেখলাম তাদের মধ্যে তুমুল বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হয়েছে তখন কর্মসূচী বাতিল করার নির্দেশ দিয়ে সবাইকে চলে যেতে বলি। এনিয়ে আর তেমন কিছু হয়নি বলেও জানান বিএনপির এ নেতা।

এবিষয়ে বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। এ ঘটনায় থানায় কোন অভিযোগ কিংবা মামলা হ য়নি বলেও জানান তিনি।

এফএ/অগ্নিবাণী

এই সংবাদটি শেয়ার করুন
Share on Facebook
Facebook
Tweet about this on Twitter
Twitter
Pin on Pinterest
Pinterest

Leave a Reply

Your email address will not be published.