রাজশাহী পিএন স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সেচ্ছাচারিতায় ভর্তি বঞ্চিত তরুনিমা!
নিজস্ব প্রতিবেদক
তরুনিমা ধর (৯) নামের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সরকারি বিদ্যালয়ে লটারির ভর্তি তালিকায় নাম আসার পরও ভর্তি নিলেন না রাজশাহীর সরকারি পিএন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক। এর ফলে দেড় মাসেও শিশুটি ওই বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেনি। ভর্তির নির্দেশিকা অনুযায়ী সবকিছু ঠিক থাকার পরও ভর্তি না নিয়েই নানা অজুহাতে ফিরিয়ে দেন তিনি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদনও করেছেন শিশুটির মা।
অনামিকা সরকার হলেন শিশুশিক্ষার্থী তরুনিমা ধরের মা। তিনিও পেশায় শিক্ষক। রাজশাহী সরকারি শিক্ষা বোর্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাধ্যমিক শাখায় কর্মরত রয়েছেন।
প্রধান শিক্ষকের বিষয়ে তরুনিমার মা অনামিকা সরকার বলেন, নানান অযুহাত দেখিয়ে পিএন স্কুলের প্রধান শিক্ষিক তৌহিদ আরা তার মেয়ের ভর্তি আটকিয়ে রেখেছেন। মূলত তিনি এককভাবেই এই সেচ্ছাচারিতা করছেন। অথচ, ওই ভর্তি কমিটির সবাই চান তাঁর মেয়েকে ভর্তি করানো হোক। দেড় মাস ধরে মেয়ের ভর্তির জন্য বিভিন্ন স্থানে ঘুরছেন।
তিনি জানান, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানও সরকারি পিএন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে ভর্তি নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। কিন্তু তিনি বারবার বলছেন, তিনি (অনামিকা) নাকি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নন। তিনি নাকি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক। তাঁদের নীতিমালায় নেই, তাই তিনি ভর্তি নিতে পারবেন না যা সম্পূর্ণ অমূলক-অযৌক্তিক। মেয়েকে ভর্তি না করতে পেরে গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কাছে একটি আবেদনও করা হয়েছে বলে জানান ভর্তি বঞ্চিত শিশুশিক্ষার্থীর মা।
এবিষয়ে সরকারি পিএন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তৌহিদ আরা গণমাধ্যমকে জানান, তিনি কোনো শিক্ষার্থীর ভর্তি আটকে রাখার ক্ষমতা রাখেন না। ভর্তি কমিটিতে থাকা সদস্যরা আপত্তি করেছেন, নীতিমালায় শুধু সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের সন্তানেরা ভর্তি হতে পারবে। এ ক্ষেত্রে অনামিকা সরকার স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক। এ কারণেই ভর্তি নেওয়ায় একটু সমস্যা হচ্ছে। সামনে সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে মেয়েটিকে ভর্তি করানো হবে।
ওই আবেদনে অনামিকা সরকার উল্লেখ করেন, তিনি রাজশাহী সরকারি শিক্ষা বোর্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাধ্যমিক শাখায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে ২০১৭ সাল থেকে কর্মরত আছেন। তাঁর মেয়ে তরুনিমা গত বছরের ১১ ডিসেম্বর সরকারি স্কুলে ভর্তিতে অনলাইন লটারিতে অংশ নেয়। সেখানে অংশ নিয়ে তরুনিমা শিক্ষক কোটায় প্রথম অপেক্ষমাণ তালিকায় রাজশাহী শহরে প্রথম স্থান লাভ করে। এই ফলাফল তাঁরা টেলিটকের নম্বরের খুদে বার্তার মাধ্যমে জানতে পারেন।
এই খুদে বার্তা পেয়ে তাঁরা ২১ ও ২৩ জানুয়ারি সরকারি পিএন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে যান মেয়েকে ভর্তি করানোর জন্য। কিন্তু পিএন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তৌহিদ আরা ভর্তি না নিয়ে তাঁদের ফিরিয়ে দেন। এ অবস্থায় তাঁরা মেয়ের ভর্তি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
তবে এবিষয়ে রাজশাহী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন বলছেন, ‘যেহেতু রাজশাহী সরকারি শিক্ষা বোর্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে সরকারিকরণ হয়েছে সেহেতু অনামিকা সরকারের শিশুকন্যা বিধি মোতাবেক ভর্তি সুযোগটি প্রাপ্য। এসংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে শুনেছি আগামী ১৫ মার্চ একটি মিটিং এর আহব্বানও করা হবে।’
জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. কামরুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যদি কোনো শিক্ষার্থীর লটারিতে নাম আসে, তবে সে নিশ্চয় ভর্তি হতে পারবে। ওই মেয়েটির মা স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখার শিক্ষক। কিন্তু নীতিমালায় আছে, এটা বিদ্যালয় হতে হবে। আজ এ বিষয়ে সভা ছিল। বিশেষ কারণে সভাটি স্থগিত করা হয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে একটি সভা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমরা আশা করি, ওই শিক্ষার্থীর পক্ষেই ফলাফল যাবে।’
অগ্নিবাণী/এফএ