পাখির মলত্যাগের অজুহাতে বৃক্ষনিধনে রামেক কর্তৃপক্ষ, তোপের মুখে নিধন পন্ড!
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
গত কয়েক বছর ধরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল চত্বরের কড়ই গাছগুলোতে নির্ভয়ে আবাস গড়েছিল শামুকখোল, পানকৌড়ি, নিশিবক ইত্যাদি পাখি। কিন্তু সেই আবাসেই এবার করাত চালিয়ে দিল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পাখিদের তাড়াতে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের কয়েকটি বড় কড়ই গাছের ডালপালা ছেঁটে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কড়ই গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলেন হাসপাতালের কোনো একজন কর্মকর্তা। এমন সময় একটি পাখি মলত্যাগ করলে সেটি ওই কর্মকর্তার গায়ে পরে। এতে ভীষণ ক্ষেপে যান তিনি। এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানীর কাছে অভিযোগ করেন ওই কর্মকর্তা।
অভিযোগ পেয়েই সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে রামেক জেনারেল শামীম ইয়াজদানী কড়ই গাছগুলোর ডালপালা ছেঁটে দেওয়ার নির্দেশ দেন। নির্দেশ পেয়ে কর্মীরা তাৎক্ষণিক গাছের ডালপালা ছাঁটতে শুরু করেন। তবে সেখানে উপস্থিত পাখিপ্রেমী কিছু মানুষদের প্রতিবাদে ডালপালা ছাঁটার কাজে ছেদ পড়ে।
আরও পড়ুন – বনের পথে দ্রুতগতির গাড়ি, প্রাণ গেল ‘বিপন্ন’ বাঘডাশের
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কড়ই বৃক্ষের ডালপালা ছাঁটা শুরু হলে পাখিপ্রেমী মানুষ ও গণমাধ্যম কর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে বাঁধা দেন। এ সময় পাখিপ্রেমী এসব মানুষকে হাসপাতাল চত্বর থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেন নিরাপত্তা কর্মীরা। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডাও হয়। সাধারণ মানুষও প্রতিবাদ করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে গাছগুলোর সব ডালপালা না কেটেই ফিরে যান হাসপাতালের কর্মীরা।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, হাসপাতাল এলাকা কখনো পাখির অভয়ারণ্য হতে পারে না। এটি হাসপাতালের কনসেপ্টের সঙ্গে যায় না। পাখির বিষ্ঠায় হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় সমস্যা হচ্ছে। এ কারণেই জরুরি বিভাগ ও শৌচাগারের সামনের দুটি গাছের ডালপালা কাটার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
এদিকে, পাখিপ্রেমীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই রামেক কলেজ ক্যাম্পাস, রামেক হাসপাতাল এলাকা ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালাইড সায়েন্সের সামনের এলাকার গাছগুলোতে বিভিন্ন জাতের পাখ-পাখালির বাস। পাশের সড়ক বিভাজকেরও গাছগুলোতেও বাসা বেঁধেছে পাখিরা।
সম্প্রতি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের আমবাগানে শামুকখোল পাখির বাসা ভাড়ার জন্য পাঁচজন বাগান মালিককে তিন লাখ ১৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। আমচাষিদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে এ বরাদ্দ দেওয়া হয়।
জানা গেছে, বেশ কয়েক বছর ধরে বর্ষাকালের শেষে বাচ্চা ফোটানোর আগে খোর্দ্দ বাউসার এই আমবাগানে বাসা বাঁধে শামুকখোল পাখি। গত বছর বাগান মালিক বাগান পরিচর্যায় পাখিদের উচ্ছেদের উদ্যোগও নেন। তাতে বাধা দেন স্থানীয় পাখিপ্রেমীরা। পরে কেন ওই এলাকাকে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন উচ্চ আদালত। পরে আদালতের নির্দেশেই ক্ষতিপূরণ পান বাগান মালিকরা।