‘সাংবাদিক বন্ধুরা আদালত থেকেই সুবিচার পাবেন’
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
প্রয়াত আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিমকে নিয়ে ফেসবুকে ‘কটূক্তি’ করার অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক কাজী জাহিদুর রহমানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জেল খাটতে হয় ৭১ দিন। যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম ও সোনালী সংবাদ সম্পাদক লিয়াকত আলীসহ আট সাংবাদিকের নামে আইসিটি আইনে ২০১৫ সালে মামলাও করেছিলেন তিনি। সেই আইসিটি মামলায় তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
রাবি শিক্ষক কাজী জাহিদুর রহমানের দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতারকৃত সাংবাদিকদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সরব হয় বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনগুলো। রাবি ক্যাম্পাসসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূর্চীও পালিত হয় যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বেশ ভাইরাল হয়ে পড়ে। এছাড়া সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন অঙ্গনে আলোচনার বিষয়-বস্তুতে পরিনত হন কাজী জাহিদুর রহমান ও সাংবাদিক গ্রেফতারের ঘটনাটি।
আমাদের রাজশাহী নামক একটি ফেসবুক পেইজে এক শিক্ষার্থী একটি স্ট্যাট্যাসে লেখেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাসে প্রথম কোনো সাংবাদিক কারাগারে গেলো। মানিক রায়হান বাপ্পীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করি।’ সেখানে অনেকেই সাংবাদিকদের মুক্তির দাবিতে কমেন্ট করেন। সেই স্ট্যাট্যাসে প্রেক্ষিতে কাজী জাহিদুর রহমান একটি মন্তব্য করেন।
মন্তব্যটি হুবহু তুলে ধরা হলো- ‘এই মামলাটি ২০১৫ সালের। মামলাটি নিস্পত্তিতে সাংবাদিকদের যে ভূমিকা থাকার প্রয়োজন ছিল, সেই ভূমিকা তারা রাখেননি। মামলা করার আগে যথাযথ নিয়ম মেনেই কাজী জাহিদ নিজ হাতে সশরীরে সোনালী সংবাদ নামের পত্রিকা অফিসে প্রতিবাদ নিয়ে গিয়েছিলেন। ডেস্কে দায়িত্বরত একজনের হাতে তুলে দেবার পরেও তিনি সেটা পাত্তা দেননি। কাজী জাহিদকে তিনি বলে দেন, বক্সে ফেলে যেতে। তারপরে হয়তো সেটা ডাস্টবিনেই ফেলে দেয়া হয়েছিল। এক্ষেত্রে ওই পত্রিকা বা রিপোর্টার কি দায়িত্বশীল আচরণ করেছিল?
যুগান্তর অফিসেও প্রতিবাদ পাঠানো হয়েছিল। সোহরাওয়ার্দী হলের তৎকালীন প্রভোস্ট আইন বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর আনিসুর রহমান নিজে স্বাক্ষর করে প্রতিবাদ পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু যেহেতু কোন পত্রিকা প্রতিবাদ ছাপেনি, সেহেতু পত্রিকা এটাই বুঝাতে চেয়েছে যে কাজী জাহিদ হলে ৩০০০ টাকা করে সিট বিক্রি করেছে। হলের একজন হাউজ টিউটর সিট দেবার কোন ক্ষমতা রাখেন না। তাছাড়া কাজী জাহিদ উক্ত হলে যোগদান করেছেন ঘটনার মাত্র কয়েকদিন আগে। তিনি হলের কোন কমিটিতে ছিলেন না। তিনি যোগদানের পর থেকে হলে কোন সিটই বরাদ্দ হয়নি।

এমনকি কাজী জাহিদের কিছুদিন আগে যোগদান করা তৎকালীন প্রভোস্ট যোগদানের পরে নিউজ করার দিন পর্যন্ত হলে কোন আবাসিকতা প্রদান করা হয়নি। তাহলে যে সকল পত্রিকা ওই নিউজ ছেপেছিল, তারা কি সঠিক দায়িত্ব পালন করেছিল? এমন একটি মিথ্যা নিউজ রাজশাহীর একটা পত্রিকা লাল হেডিং দিয়ে প্রথম পাতায় ছেপেছিল। এর কারণ কি? এর উদ্দেশ্য আসলে কি ছিল? কেনইবা তারা প্রতিবাদ ছাপালো না? এসবের উত্তর কি হবে?
সেদিন যদি প্রতিবাদ ছাপানো হতো, তবে মামলা করার কোন প্রয়োজন হতো না। মানিক রায়হান বাপ্পির নাম এসেছে পুলিশের তদন্তে। কাজী জাহিদ মামলায় কোন সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করেনি। তারা বেশীরভাগই ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী বলেই কারো নাম উল্লেখ করেনি। মামলা হওয়ার পরে স্থানীয় একটি পত্রিকার পক্ষ থেকে নেগোসিয়েশন করার চেষ্টা হয়েছে, তবে সেটা ছিল খুবই হাস্যকর এবং অগ্রহণযোগ্য।
কাজী জাহিদকেই কোন রকম শর্ত ছাড়া মামলা তুলে নিতে হবে। এটা কখনই সম্ভব নয়। ওই পত্রিকাকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলে ভুল স্বীকার করে নিউজটি প্রত্যাহার করে একটি নিউজ ছেপে দিতে এবং সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। কিন্তু পত্রিকাটি নিজে কোন দোষ বা ভুল স্বীকার করতে রাজী ছিল না। তার মানে কাজী জাহিদকেই সিট বিক্রির দায় কাঁধে নিয়ে নিউজটি সত্য মেনে নিয়ে মামলাটি প্রত্যাহার করতে হবে। এটা কোন ধরণের জাস্টিফিকেশন? এখন যেহেতু বিষয়টি আদালতে গেছে। তাই আশা করি সাংবাদিক বন্ধুরা আদালত থেকেই সুবিচার পাবেন।’
উল্লেখ্য, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদক কাজী শাহেদ প্রতিবাদ জানান। একই সাথে তিনি সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে মানববন্ধনের ডাক দেন। যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম ও সোনালী সংবাদ সম্পাদক লিয়াকত আলীসহ আট সাংবাদিকের নামে আইসিটি আইনে হওয়া মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধনটি পালিত হবে বলে তিনি তার স্ট্যাটাসে জানান।