রাজশাহীতে ক্রেতা শূণ্যে আমের হাট-বাজার, শঙ্কায় আম ব্যবসায়ীরা!
স্টাফ রিপোর্টার
জ্যৈষ্ঠের বৈচিত্রময় এ দিনে রাজশাহীর আমের বাজার ও আড়তগুলো বসতে শুরু করেছে। কিন্তু এই আমের বাজার গুলোতে চোখে পড়ার মতন নেই ক্রেতারা। অপরদিকে রাজশাহীতে দিন দিন বেড়ে চলেছে করোনার প্রকোপে। করোনার কারণে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বড় বড় ক্রেতারাও আসতে নারাজ। ফলে রাজশাহীতে অধিকাংশ আমের হাট-বাজারগুলোই ক্রেতা শূণ্য।
১৫ মে থেকে সকল প্রকার গুটিজাতের এবং ২০ মে থেকে গোপালভোগ আম পাড়া শুরু হয়েছে। রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের মোকাম পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাট। এ হাটের আশপাশের সড়কগুলোর যেদিকে চোখ যাবে চোখে পড়বে আম ভর্তি ভ্যান। বাগানের কাঁচা-পাকা আম নিয়ে সব ভ্যানের গন্তব্য বানেশ্বর বাজারে।
কিন্তু শুক্রবার সকালে হাটে গিয়ে দেখা গেল, বাজারে উঠেছে গোপালভোগ ও গুটিজাতের আম। ২৫ মে জেলা প্রশাসন থেকে লোকনা, লক্ষণভোগ, রানীপছন্দ আম পাড়ার নির্দেশনা থাকলেও এই জাতের আম বাজারে নেই। কারণ এই জাতের আম গাছ থেকে পাড়ার এখনও উপযুক্ত হয়নি। ল্যাংড়া আম ৬ জুন, আমরুপালি ও ফজলি ১৫ জুন, আশ্বীনা ১০ জুলায় থেকে পাড়া শুরু হবে বলে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা রয়েছে।
বানেশ্বর ভূমি অফিস মাঠে খোলা আকাশের নিচে ভ্যানের ওপর সাজিয়ে আম বিক্রি করছেন হাতে গোনা কয়েকজন আম চাষী ও ব্যবসায়ী। আর করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এখনো আসা শুরু করেনি পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এখন শুধু বিভিন্ন এলাকার দুই একজন ছাড়া স্থানীয় আড়তদার ও সাধারণ ক্রেতারা কিনছেন আম।
মিনহাজ শাকিল নামে পুঠিয়ার এক আড়তদার জানান, এখনও ঢাকাসহ বাইরের তেমন কোন ক্রেতা আসেনি আমরাই অল্পকিছু করে গোপালভোগ কিনছি। করোনার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এখানে এসে আম কিনে নিয়ে যেতে পারবে কিনা তা জানি না। বর্তমানে গোপালভোগ জাতের আম ১২শ থেকে ১৫শ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। আর গুটি জাতের আমের দাম প্রতি মণ ৫শ থেকে ৮শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু করোনায় রাজশাহীর ক্রেতারাই আম নিতে বের হচ্ছে না, সেখানে ঢাকাসহ বাইরের বড় ক্রেতারা আসবে কিনা সন্দেহ। যার কারণে সঙ্কায় দিন কাটছে আমাদের।
পবা উপজেলার মো. রবিউল ইসলাম নামের আম ব্যবসায়ী দৈনিক অগ্নিবাণী প্রতিনিধিকে বলেন, একে তো করোনাভাইরাসের ক্রান্তিকালীন সময় অপরদিকে ঝড়-বৃষ্টি। ঝড়ে-বৃষ্টির কারণে অনেক আমের ক্ষতি হয়েছে। আবার করোনার কারণে যাতায়াত ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির দরুণ ঢাকার বাইরের ফলের আড়তদারুগুলো আসছে না। ক্রেতাবিহীন বাজার ও নানারূপ সমস্যা নিয়ে এবার আমের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না।
পুঠিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার শামসুন নাহার ভূইয়া দৈনিক অগ্নিবাণী প্রতিনিধিকে জানান, আমাদের রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক স্যার সহ আমরা বৃহস্প্রতিবার বানেশ্বর বাজার আমের হাট পরির্দশন করেছেন। করোনার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ব্যবসায়ীদের থাকার জন্য হোটেল মালিকদের এবং আড়তদারদের সাথে কথা বলে সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুঠিয়া কৃষি অফিস সবসময় আমের হাট মনিটরিং করবে।
তিনি আরও জানান, উপজেলায় এবার আমের উৎপাদন এরিয়া প্রায় ১৫২৭ হেক্টর এবং লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮,৩২৪ মে. টন। যা গতবছর ছিল ১৮,৩০০ মে. টন এবং বাগান ছিল প্রায় ১৫২৫ হে. এরিয়ায়। বৈরি আবহাওয়ার কারণে গত মৌসুমে এই এলাকায় আমের উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৮ হাজার তিনশত মে. টন এবং চলতি বছর উৎপাদন ধরা হয়েছে ১৮ হাজার তিনশত চব্বিশ মে. টন আম।