হোটেল সূর্যমুখীতে দেহ ব্যবসায় ২ যুগ, উদাসীন পুলিশ প্রসাশন!
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহীতে অতিপরিচিত একটি নাম ‘হোটেল সূর্যমুখী’। বিভিন্ন সময় মালিকানা বদল হলেও অবৈধ দেহ ব্যবসা বন্ধ হয়নি রাজশাহীর কুখ্যাত আবাসিক হোটেল সূর্যমুখীতে। রাজশাহী নগরীর প্রাণকেন্দ্রে সাহেববাজার বড় মসজিদের পাশেই অবস্থিত এই হোটেলে চলছে অবাধ দেহ ব্যবসা।
সূত্র জানায়, শুধু দেহ ব্যবসায় নয় পাশাপাশি চলছে মাদক সেবন ও বিক্রির কারবারও চলছে হোটেলটিতে। মাঝে মধ্যে আইন-শৃংখলা বাহিনীর অভিযান চালালেও বন্ধ হয় না অবৈধ এই যৌন কারখানা। অভিযোগ রয়েছে পুলিশকে ম্যানেজ করেই এই কারবার চালাচ্ছে মালিক পক্ষ।
নগরীতে কুখ্যাত এই হোটেলটি পরিচালনা করেন শরীয়তপুর জেলার বাসিন্দা মনির শিকদার। জানা যায়, একসময় এই হোটেলের বয় ছিলেন তিনি। ধীরে ধীরে অনৈতিক কাজে যাদুকর হয়ে ওঠেন মনির শিকদার। প্রতিদিন মোটা আয় দেখে নিজেই নিয়ে নেন হোটেলটির মালিকানা। এরপর পেশাদার যৌনকর্মীদের নিয়ে গড়ে তোলেন এক সুবৃহৎ নেটওয়ার্ক।
অভিযোগ উঠেছে, এই যৌনকর্মীদের অনেকেই জিম্মি হয়ে রয়েছেন মনিরের কাছে। অনৈতিক এই কাজ থেকে বেরিয়ে যাবার চেষ্টা করেও পারেননি অনেকেই। সখে, নেশায়, পেশায় কিংবা অভাবে পড়ে এই হোটেলে অবৈধ কাজের জন্য এসে ফেঁসে রয়েছেন অনেকে। প্রশাসন ও দলীয় বেশকিছু সমর্থন থাকায় অনেকেই তার কাছে নিরুপায় হয়ে রয়েছেন বলে জানান।
দৈনিক অগ্নিবাণীর তদন্তে আরো জানা যায়, এই হোটেলের বাইরেও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়েও দেদারসে দেহ ও মাদক ব্যবসা চালাচ্ছেন মনির শিকদার। আর এই কাজ নির্বিঘেœ চালিয়ে যেতে তিনি গড়ে তুলেছেন আলাদা সন্ত্রাসী বাহিনী। আগন্তুক না বুঝে হোটেলে কিংবা এদের বাসায় উঠলেই জিম্মি করে আদায় করেন অর্থ। দিনের পর দিন শুরু করেন বø্যাকমেইল। তবে মানসম্মানের ভয়ে ঘটনার শিকার কেউই অভিযোগ দেয় না থানায়। যার কারণে তিনি থেকে যান ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
সুত্রে জানা যায়, আবাসিক হোটেল সুর্যমুখীর তৃতীয় তালায় ২৬ নম্বর কক্ষে দিনের বেলায় অবস্থান করেন তরুণীরা। এদের মধ্যে কয়েকজন শিশু যৌনকর্মীও রয়েছে। রাতে এরা ১০, ১২, ১৪ ও ১৮ নম্বর কক্ষে অবস্থান করেন। অপেক্ষায় থাকেন ডাক পড়ার। ডাক পড়লে গভীর রাতেও বাইরে যান যৌনকর্মীরা।
হোটেল সূর্যমুখীর প্রধান টার্গেট রাজশাহীতে অবস্থানকারী উঠতি তরুণ-তরুণীরা। তার সুবিশাল নেটওয়ার্কের মারফতে প্রেমে ছ্যাঁকা খাওয়া তরুণীদেরকে তিনি তার বলয়ে নিয়ে আসেন তার ট্রেনিং প্রাপ্ত যৌন কর্মী ও গুন্ডা পান্ডা দ্বারা। ঘনিষ্ঠতা ও বিভিন্ন প্রলোভন দ্বারা ফাঁসানো হয় স্কুল কলেজ পড়–য়া তরুণীদের। এমনকি ফেসবুকে তরুণ তরুণীদের সাথে চ্যাটিং এর মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরীর মাধ্যমেও ফাঁদে ফেলা হয় বলেও জানা যায়।
এছাড়াও বিভিন্ন সময় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থেকেই হোটেলের দালালরা আহবান করতে থাকেন তরুণদের। অনেকেই এমন আহবানে বিব্রত হন। নামমাত্র ভাড়ায় হোটেলটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া প্রেমিক যুগলকে একান্তে সময় কাটানোর সুযোগ দেয়। প্রেমিকের সাথে এই হোটেলে এসে কেউ কেউ জিম্মি হয়ে পড়েন। একসময় এরাই যুক্ত হন হোটেল মালিকের সেক্স র্যাকেটে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, প্রকাশ্যে এমন কর্মকান্ডে এলাকার আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে যে কোন সময়। ঘটতে পারে অপ্রীতিকর ঘটনাও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে অবৈধ এই কারবার বন্ধে এখনই উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানান স্থানীয়রা।
অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন হোটেল মালিক মনির শিকদার। তার দাবি, পেটের দায়েই তিনি এই কাজ করছেন। তার এই হোটেলে কাজ করে অনেকেই সংসার চালাচ্ছেন। তিনি জানান, নগরীর সাহেব বাজার ও লক্ষীপুর এলাকার ৮-১০টি আবাসিক হোটেলেই এমন ধরনের অবৈধ হোটেল ব্যবসা চলছে। কিন্তু তার হোটেলের কুখ্যাতি থাকায় বারবার এই হোটেলের নাম আসছে আলোচনায় আসছে বলে তার অভিযোগ।
এবিষেয়ে মহানগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস দৈনিক অগ্নিবাণীর প্রতিনিধিকে জানান, ‘নগরীতে এমন অবৈধ হোটেল পরিচালনা হচ্ছে কি-না তা আমার জানা নেই। যদি হয়ে থাকে তবে অচিরেই এই সমস্ত হোটেলে অভিযান পরিচালনা করে বন্ধ করে দেওয়া হবে। আর যদি কোনো পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যদি ম্যানেজ করে হোটেল পরিচলনায় সহযোগিতার অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।