রাজশাহীতে মহানগর যুবলীগে আন্তঃকোন্দল, সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ বাবুকে গোপনে শোকজের অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার:
যুবলীগে শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর রাজশাহী মহানগর যুবলীগে চলছে কাদা ছোড়াছুড়ি। আন্তঃকোন্দলের কারণে যুবলীগের নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়া বিষেদাগার করছেন। এনিয়ে মহানগর যুবলীগে উত্তেজনা বিরাজ করছে। রাজশাহী মহানগর যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ফেসবুকে আন্তকোন্দলের জের ধরে ‘দলীয় বিভেদ সৃষ্টি’র কারণ দেখিয়ে বুধবার (৩ অক্টোবর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আশরাফ বাবুকে শোকজ করা হয়েছে। শোকজের বিষয়টি দৈনিক অগ্নিবাণী প্রতিনিধিকে নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী মহানগর যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক মো. মাহমুদ হাসান খান চৌধুরী (ইতু)।
তিনি জানান, শোকজ নোটিশটি জারি হয় ২৮ সেপ্টেম্বর এবং তা সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আশরাফ বাবুর নিকট প্রেরণ করা হয় ৩০ সেপ্টেম্বর। নোটিশের বিষয়ে ইতু বলেন, মহানগর যুবলীগ তথা আওয়ামী লীগের সুনাম যেন ক্ষুন্ন না হয় সে কারণে শোকজ চিঠিটি গোপনভাবে সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আশরাফ বাবুর হাতে দেয়া হয়েছে। সাংগঠনিকভাবে এবিষয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়ার নিয়ম থাকলেও সংগঠনের ভাবমূর্তির কথা চিন্তা করে তা গোপনে দেওয়া হয়েছে। তিনি (আশরাফ বাবু) যা করছেন তা খুব নক্কারজনক ও সংগঠন বিরোধী। তার কারণে রাজশাহী মহানগর যুবলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন এবং দলীয় শৃংঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে।’
শোকজ নোটিশে বলা হয়েছে, ‘গত ২৪ সেপ্টম্বর সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আশরাফ বাবু ফেসবুকে পোস্ট করা একটি ছবির নিচে কমেন্টে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে কেন্দ্র করে কটুক্তি করেন। ছবি সম্বলিত সংবাদটির শিরোনাম ছিল- ‘যুবলীগকে পঙ্গু করার ষড়যন্ত্র চলছে।’ এছাড়াও ২ সেপ্টেম্বর আশরাফ বাবু তার নিজ ফেসবুক আইডি থেকে রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সভাপতি মো. রমজান আলীর নামে মিথ্যা, ভীত্তিহীন ও বানোয়াট তথ্য প্রচার করেন। যাতে মহানগর যুবলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়। এমন সংগঠন বিরোধী এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে হীন মিথ্যাচার সংগঠনের বিভেদ সৃষ্টির দায়ে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা পত্র পওয়ার ৭দিনের মধ্যে নিম্নস্বাক্ষরকারীর কাছে জানাতে নোটিশে বলা হয়েছে।’
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, ‘আপনার অভিযোগের পক্ষে সকল তথ্য-প্রমাণাদি ও নথিপত্র কারণ দর্শানোর জবারের সাথে সংযুক্ত করার জন্য আহব্বান জানানো যাচ্ছে, অন্যথায় সংগঠন আপনার বিরুদ্ধে নিয়ম অনুযায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য থাকিবে।’
শোকজ নোটিশের বিপরীতে মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আশরাফ বাবু মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) ডাকযোগে রেজিস্ট্রি মারফত রাজশাহী মহানগর যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক বরাবর প্রেরণ করেন বলে অগ্নিবাণী প্রতিনিধিকে জানান।
উত্তরে যা বলা হয়েছে, ‘আপনার (দপ্তর সম্পাদক) জ্ঞাতার্থে বলছি- বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দলের মধ্যে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন, আমি রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আশরাফ বাবু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একজন নগন্য সৈনিক হিসেবে অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি।’
এছাড়াও তিনি দপ্তর সম্পাদককে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘আপনার কারণ দর্শানো নোটিশটি রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের অনুমতিক্রমে আমাকে দিয়েছেন কি? যদি তাদের অনুমতিক্রমে দিয়ে থাকেন, তাহলে নোটিশে উল্লেখ নেই কেনো? নোটিশে নাম উল্লেখ না করে আপনি দলীয় শৃংঙ্খলা ভঙ্গ করেননি কি? এছাড়াও হোটেল সিটি প্লাস তিন বছরের টেন্ডার ওটিপি/ইজিপি’র মাধ্যমে বরাদ্দ নেননি- এটা বলা আপনার কাছে সাংগঠনিক বিধি লংঙ্ঘন মনে হলো কেনো?’
সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু জানান, আমি সংগঠন পরিপন্থি কোনো প্রকারের কাজ করিনি, যার কারণে আমাকে শোকজ করা হবে। এছাড়া, দপ্তর সম্পাদক আমাকে যে শোকজ লেটার পাঠিয়েছেন সেখানে সভাপতি ও সেক্রেটারির স্বাক্ষর নেই। শোকজ নোটিশে সুনির্দিষ্টভাবে তেমন কিছুর উল্লেখও নেই। যুবলীগের চেয়ারম্যানকে কটুক্তির বিষয়টি কি নিয়ে, কার প্রোফাইলে, কোন লিংক এড্রেসে এবং কি বক্তব্য দিয়েছি সেটিরও সুস্পষ্ট কোনো উল্লেখ নেই। আমার জানা মতে, সবকিছুর একটা নিয়ম আছে। একটা ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকে শোকজ করলেও ওয়ার্ডের সভাপতি/সেক্রেটারি এবং মহানগরের সভাপতি, সেক্রেটারি, সাংগঠনিক ও দপ্তর সম্পাদকসহ অন্যান্যদের অবহিত করতে হয়। কিন্তু এখানে তা না করে গোপনে সেচ্ছাচারিতা করা হচ্ছে। সেই সাথে কেন্দ্রীয় কমিটিকে শোকজের বিষয়টি নিয়ে অন্ধকারে রাখা হচ্ছে। অতীতে ওয়ার্ডের নেতাদের মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে বহিষ্কার করেছেন বহু, কিন্তু আমাকে করতে হলে সেন্ট্রাল পর্যন্ত জানাতে হবে আর এটাই নিয়ম। যা উনাকে (সভাপতি) মানতে হবে। এখানে সেচ্ছাচারিতা চলবে না।”
তিনি আরও বলেন, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে যুবলীগ চেয়ারম্যানকে নিয়ে যে কটুক্তির কথা বলেছেন তা অবান্তর। আমি এমন কিছুই করিনি যা দ্বারা প্রমাণ হয় যে- আমি সংগঠন বিরোধী কাজ করেছি। বরং, আমি দলীয় অনিয়ম তুলে ধরেছি। দলের দূর্নীতিবাজের দূর্নীতি তুলে ধরেছি মাত্র। তাছাড়া, ১৯নং ওয়ার্ডের দীঘল কান্দি ঝিলটির আরএস ও এএস দাগ নং এবং ঝিলটি পর্যায়ক্রমে কারা লিজ নিয়েছিলো সেটির প্রমাণ আমিসহ আরো অনেকের কাছে রয়েছে। উক্ত ঝিলটি দখল কিংবা ভরাট যাহা মহামান্য হাই কোর্ট বিভাগের ৯৬২৬/২০০০ রিট নং মোকাদ্দমা আদেশের অবমাননার সামিল। যেহেতু আমার বাড়ি ১৯নং ওয়ার্ডে সেহেতু এ ওয়ার্ডের দূর্নীতিবাজ ভূমিদস্যূদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা আমার নৈতিক দায়িত্ব এবং এই দায়িত্বে আমি অনড়।”

আশরাফ বাবু সময়ের আলোর কাছে উল্টো অভিযোগ করে বলেন, আমাকে চরমভাবে রাজনৈতিক হয়রানি ও হেনস্থা করার জন্য গভীর ষড়যন্ত্র করছেন সভাপতি। যেমনটা অতীতের ত্যাগি নেতাদের ক্ষেত্রে করা হয়েছিলো। তার অভিযোগ, বাপ-ছেলে, ভগ্নিপতি, চাচাতো ভাই, ভাগ্নে-ভাইপো দিয়ে যুবলীগ দখল করেছের তিনি (সভাপতির পরিবার)। বাড়ির লোকজন ছাড়াও তার আস্থাভাজন এলাকার লোক ও মহানগরের অন্যান্য চাটুকার দালাল বিএনপি-জামায়াতের লোকজনদের দিয়ে সাজানো মহানগর যুবদল কমিটি, যা তার সেচ্ছাচারিতায় চালিত।
তিনি আরোও অভিযোগ করে বলেন, ‘রাজশাহী মহানগরীর যুবলীগের যে কমিটি আছে সেটি কালো চাদরে ঢাকা। এক সম্মেলন শেষ হয়ে আবারো আরেক সম্মেলনের সময় হতে চললো তাও জানলাম না, কে কমিটিতে আছে, কে নাই? যাকে কোনোদিন যুবলীগের মিছিল মিটিং-এ দেখিনি, সেও এসে বলে আমি রাজশাহী মহানগর যুবলীগের অমুক-তমুক।’
‘যিনি (দপ্তর সম্পাদক) আমাকে শোকজ লেটার পাঠিয়েছেন, তিনি নিজেই নিয়মের লঙ্ঘন করেছেন। আমি তাকে শোকজের যথাযথ উত্তর দিবো। কিন্তু কারো দূর্নীতির বিষয়ে দপ্তর সম্পাদককে কোনো প্রকারের তথ্য প্রমাণ দিতে সাংগঠনিকভাবে আমি বাধ্য নয়। তারা প্রয়োজন বোধে আদালতে মামলা করতে পারেন, এবিষয়ে আমি মোটেও বিচলিত নই। যা তথ্য-প্রমাণ দেওয়ার আমি আদালতেই দেবো- বলেন আশরাফ বাবু।
কারণ দর্শানো নোটিশ ও আশরাফ বাবুর অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী অগ্নিবাণীকে জানান, ‘দলের মধ্যে ‘বিভেদ সৃষ্টি’, নিজ দলীয় নেতার নামে ‘সোসাল মিডিয়ায় অপপ্রচার’ ও ‘দলীয় শৃংঙ্খলা ভঙ্গের’ কারণে তাকে (আশরাফ বাবু) শোকজ করা হয়েছে। আমি দলীয়ভাবে রাজশাহী মহানগর যুবলীগের ‘সভাপতি’ হতে পারি, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমার নিজের ‘ব্যবসায়িক পরিচিতি’ রয়েছে। সে আমার ‘ব্যক্তি পরিচয়’ বা আমার ‘প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়’ মো. রমজান আলী কন্সট্রাকশন ফার্মের নামে মিডিয়াতে আমার বিষয়ে অভিযোগ করতে পারত। কিন্তু সে আমার ‘ব্যক্তি পরিচয়টা’কে তুলে না ধরে ‘রাজনৈকি পরিচয়’ তুলে ধরেছে। সে (আশরাফ বাবু) আমার প্রাণপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগকে ঘোর অসম্মান করেছে এবং রাজশাহী মহানগর যুবলীগের দলীয় শৃংঙ্খলা ভঙ্গ করেছে। তার কর্মকান্ডে শুধু যুবলীগ কেনো, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগেরও যথেষ্ট সুনাম খর্ব হচ্ছে।’
প্রেস রিলিজের মাধ্যমে শোকজ লেটার না দেওয়ার বিষয়ে যুবলীগ সভাপতি বলেন, ‘শুধু তাই নয়, সোসাল মিডিয়াতে যুবলীগের চেয়ারম্যানকেও কটুক্তি করা হয়েছে এবং আমার বিরুদ্ধেও করা হয়েছে জমি দখল ও টেন্ডারবাজির অভিযোগ। যার জবাব আশরাফ বাবুকে দিতে হবে তথ্য প্রমাণ সমেত। দপ্তর সম্পাদক একটি সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সে কাজ করবে সভাপতি/সেক্রেটারির আদেশক্রমেই। তার একার কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে কাউকে শোকজ বা অন্য কোনো চিঠি দেওয়ার এখতিয়ার নেই। শোকজ লেটারট পাঠানো হয়েছে আমাদের-ই সম্মতিক্রমে। চিঠিতে সব সময় যে সভাপতি/সেক্রেটারির স্বাক্ষর থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই।’
তিনি আরোও জানান, ‘অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা একটি বর্ধিত সভা করতে যাচ্ছি। যার প্রস্তুতি আমরা ইতিমধ্যে নিচ্ছি। সেখানে সকলের উপস্থিতিতে আলোচনার মাধ্যমে এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সে (আশরাফ বাবু) যদি তথ্য প্রমাণসহ শোকজ লেটারের জবাব দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে যথাযথ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবো।’
জেনে নিন- অধিক সময় সহবাস করার উপায়
